সাইবার অপরাধ দমনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আইডি খোলার ক্ষেত্রে ই-মেইল আইডির পাশাপাশি ‘অন্য’ পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলেছে, সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশ বাস্তবায়ন এ মুহূর্তে অসম্ভব। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সাইবার অপরাধ দমন, বিশেষ করে ফেসবুক ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধ দমনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে কমিটির পক্ষ থেকে এই অপরাধ বন্ধে ই-মেইল আইডির পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্য কোনো পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়। সারাবিশ্বে ফেসবুকে নিজস্ব আইডি খোলার জন্য শুধু ই-মেইল আইডি ব্যবহার করা হয়।
বৈঠক শেষে জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেসব্রিফিংয়ে কমিটির সভাপতি আবদুস ছাত্তার সাংবাদিকদের বলেন, সাইবার অপরাধ দমনে কমিটি ওই পরামর্শ দিয়েছে। বিটিআরসি দেখবে এটা করা যায় কিনা। তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে কমিটির সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তির নামে অন্যে ভুয়া আইডি খুলছে। এর মাধ্যমে সাইবার অপরাধও বাড়ছে। এ জন্য কমিটি জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্কুল-কলেজের পরিচয়পত্র কিংবা অন্য যে কোনো পরিচয়পত্র দিয়ে ফেসবুক আইডি খোলার কথা বলেছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীর পরিচয় নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে। এটা করা অসম্ভব বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস। তিনি বলেন, এটা করা এ মুহূর্তে সম্ভব নয়।
বিশ্বের কোথাও এটা নেই। তারপরও তারা যেহেতু বলেছেন, তারা খতিয়ে দেখবেন। তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) বাংলাদেশের সাইবার অপরাধ দমনে আলাদা করে সুপারিশ দেয়ার কাজ শুরু করেছে। তাদের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে এসে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এক মাসের মধ্যে আইটিইউ’র সুপারিশ চূড়ান্ত হবে। আর সেটা পেলে সাইবার অপরাধ দমনে ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।
আর্থিক সংকটের কারণে : প্রেসব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আর্থিক সংকটের কারণে কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছে না টেলিটক ও টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিশ) মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না হওয়ায় তাদের অসম প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। যে কারণে টেলিটকের কল ড্রপ বেশি হয়। আর টেশিশের দোয়েল ল্যাপটপ চাহিদা অনুযায়ী জনগণের কাছে সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণ জানতে চাইলে সুনীল কান্তি বোস বলেন, আর্থিক দৈন্যের কারণে অন্য বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে টেলিটক। অন্য অপারেটরগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ব্যবসায় নেমেছে। কিন্তু টেলিটককে সরকার কোনো মূলধন দেয়নি। এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মুজিবুর রহমান জানান, এ অসম প্রতিযোগিতার মুখেও চলতি বছর টেলিটক ৬০ কোটি টাকা নীট লাভ করেছে। বাংলাদেশে দ্বিতীয় সাব-মেরিন কেবলের সংযোগ অতিদ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেয়া হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আরও দ্রুতগতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।