বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন আজ। এই বিশেষ দিনটি উপলক্ষে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট লিখেছেন, যেখানে দেশের নারী বিষয়ক নিরাপত্তা ও ডিজিটাল যুগের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) তিনি নিজের জন্মদিনে স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমার সঙ্গে তোলা একটি ছবি শেয়ার করে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
তারেক রহমান লিখেছেন, প্রযুক্তির বিশ্ব এখন আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে বৈশ্বিক স্তরে রাষ্ট্রের সম্পর্ক সবই বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তির গতির সঙ্গে। এই দ্রুত পরিবর্তন আমাদের সবাইকেই স্বীকার করতে হবে যে, প্রযুক্তি বিশ্ব এবং বাংলাদেশকে কীভাবে বদলে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, আমাদের কিছুক্ষেত্রে মনে হয়, আমরা যে প্রজন্মের অঙ্গীকারে বড় হয়েছি, তার তুলনায় আজকের কন্যাদের পৃথিবী কতটা ভিন্ন। অভিভাবক ও সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের মনে আশা ও উদ্বেগ দুটিই কাজ করে। কারণ, এখন যেমন বেশি সুযোগ রয়েছে, তেমনি হুমকিও বেড়ে গেছে।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ যদি এগিয়ে যেতে চায় তাহলে আমাদের মেয়েরা, নারী, বোনেরা ও সহকর্মীরা যেন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে নির্বিঘ্নে জীবন কাটাতে পারে। প্রতিদিনই নারীদের হয়রানি, হুমকি, বুলিং এবং সহিংসতার শিকার হতে হয়— শুধু কথা বলার, কাজের, পড়াশোনার বা স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্য।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, নারীর অনলাইনে, অফলাইনে, ঘরে, বাইরে, ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনেও নিরাপদ থাকতে হবে। তিনি ঘোষণা করেন যে, বিএনপি নারী নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে।
প্রথমত, ন্যাশনাল অনলাইন সেফটি সিস্টেম: যেখানে নারীরা দ্রুত ও সহজে সাইবার বুলিং, হুমকি, প্রতারণা, ভুয়া পরিচয় বা ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের অভিযোগ জানাতে পারবে। এর জন্য ২৪/৭ হটলাইন, অনলাইন পোর্টাল ও প্রশিক্ষিত রেসপন্ডার থাকবে। বড় প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলায় কন্টেন্টের দ্রুত মডারেশন নিশ্চিত করা হবে।
দ্বিতীয়ত, পাবলিক লাইফে নারীর সুরক্ষা: সাংবাদিক, কর্মী, শিক্ষার্থী বা কমিউনিটি নেত্রী হিসেবে যারা আক্রমণ বা হয়রানির শিকার হন, তাদের জন্য যথাযথ নির্দেশিকা, দ্রুত আইনি ও ডিজিটাল সহায়তা ও গোপনীয় রিপোর্টিং চ্যানেল তৈরি করা হবে। নারীদের জনজীবনে অংশগ্রহণের স্বার্থে এই উদ্যোগ জোরদার করা হবে।
তৃতীয়ত, ডিজিটাল সেফটি বিষয়ক শিক্ষা: স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য বাস্তবসম্মত ডিজিটাল নিরাপত্তার ট্রেনিং দেওয়া হবে। যারা প্রশিক্ষিত হবেন, তারা ‘সেফটি ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে কাজ করবেন। বার্ষিক সচেতনতা কার্যক্রম তরুণদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
চতুর্থত, সহিংসতা ও হয়রানির বিরুদ্ধে শক্তিশালী কমিউনিটি ভিত্তিক প্রতিরোধ: কমিউনিটি হেল্প ডেস্ক, নিরাপদ রাস্তাঘাট, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা এবং ট্রমা-সেন্টিভ রেসপন্ডার নিয়োগের মাধ্যমে নারীরা আরও নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত জীবন পার করবেন।
পঞ্চমত, নারীর নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণের জন্য জাতীয় উদ্যোগ: লিডারশিপ ট্রেনিং, মেন্টরিং নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি, স্কুল ও অফিসে চাইল্ড ডে কেয়ার সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে, যাতে নারীরা নেতৃত্ব দিতে পারেন, সফল্য অর্জন করতে পারেন এবং সমাজে অবদান রাখতে পারেন।
তারেক রহমান উল্লেখ করেছেন, নারী উন্নত হলে দেশও এগিয়ে যাবে। তাঁর মতে, আমাদের রাজনীতি, ধর্ম, জাতিসত্তা বা লিঙ্গ যাই হোক, একবাক্যে স্বীকার যে, নারীরা যত বেশি নিরাপদ, সমর্থিত ও ক্ষমতায়িত হবেন, বাংলাদেশ ততই অপ্রতিরোধ্য হবে। তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন, কন্যাদের জন্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একসাথে কাজ করার।