দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন এখনও উপযুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নির্বাচনী পদ্ধতি হিসেবে পিআর নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন, কিন্তু বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ভৌগলিক ও রাজনৈতিক মানদণ্ডে এই পদ্ধতিটি এখনও পুরোপুরি উপযোগী নয়। জনগণের অধিকার রয়েছে যেন তারা নিজেদের ভোটে কাকে বা কার প্রতি বিশ্বাস করে সংসদে প্রতিনিধিত্ব পাঠাচ্ছেন, কিন্তু প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতিতে এ বিষয়টি জনসমর্থনের জন্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাওয়া কঠিন।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এই সভার আয়োজন করা হয় জন্মাষ্টমী উপলক্ষে।
তারেক রহমান আরও বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি যদি জাতীয় সংসদ বা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে চান, তাহলে অবশ্যই জনগণের সাথে সরাসরি সাক্ষাত ও আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে তাদের রায় পান। বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে একটি হচ্ছে পিআর, তবে এই পদ্ধতিতে কিছু রাজনৈতিক মতভেদের বিষয় রয়েছে, যা গণতান্ত্রিক বিশ্বের জন্য স্বাভাবিক। এ সকল ভিন্নমত গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে যারা আসন্ন নির্বাচনের পরিস্থিতিকে ঘোলা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত, তারা আসলে গণতন্ত্রের পথকে বাধাগ্রস্ত করছেন। পাশাপাশি যদি শর্তের পর শর্ত আরোপ করে নির্বাচনকে অস্থিতিশীল করে তোলা হয়, তাহলে স্বৈরাচারী শাসনের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর পথ সুগম হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ মুক্ত রাষ্ট্র ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী নানা মন্তব্য ও শর্ত দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে যাচ্ছেন।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, যদি জনগণ সত্যিকারভাবে ভোট দানে এগিয়ে আসে, তাহলে তারা বিএনপিকে সরকারি দায়িত্ব নিতে পারবে। তবে স্বৈরাচার বিরোধীরা ভোটের মুক্ত পরিবেশ ঠেকাতে অজ্ঞান অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতেও দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল ও অন্যান্য কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী বিএনপির বিজয় ঠেকানোর জন্য নানা ধরনের অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, যা সত্যিই দুঃখজনক। দেশকে একন execution সরকারের মতো পরিচালিত করে দুর্বার জেলখানায় রূপান্তরিত করার ইতিহাস রয়েছে।
তারেক রহমান আরও বলেন, যারা মনে করেন, নির্বাচনে জনগণ বিএনপিকে ভোট দিলে ক্ষমতায় আসবে, তারা ভুল ভাবনা ভাবছেন। এই পরিস্থিতিতে যারা বিএনপির জয় রুখতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, রাজনীতি মোকাবিলা করতে রাজনীতি, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর বিশ্বাস রাখুন। বিজয় জনগণের, তাই তাদের রায় রুখতে বাধা দেওয়া ভুল।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সমঝোতা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিরোধগুলো যেন পরস্পরের অপকারে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থকে প্রচুর গুরুত্ব দিয়ে প্রত্যেক দল একযোগে কাজ করতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিন্দু সম্প্রদায়ের সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের স্বপ্ন শুধু গোষ্ঠী বা দলের নয়— এটি আমাদের সবার। এই বাংলাদেশ আমাদের, আপনারা, আমি, সব নাগরিকের গর্বের জায়গা। সব মানুষ, ধর্ম, গোষ্ঠী নির্বিশেষে এই দেশের নাগরিকরা সমান অধিকার ভোগ করবেন, এটি বিএনপির মূলনীতि।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতিত্ব করেন ও দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, সহসংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক সহসম্পাদক অপর্ণা রায় দাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুণ রায় চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সদস্য তপন চন্দ্র মজুমদার, এসএন তরুণ দে, মিল্টন বৈদ্য, পূজা উদযাপন ফ্রণ্টের জয়দেব জয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইসচেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদসহ আরও অনেকে।