শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণের মূল বক্তব্য ছিল জাতির উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দেয়া। তিনি অন্তবর্তীকালীন সর্বদলীয় সরকার প্রস্তাব করেছেন। নাতিদীর্ঘ ভাষণে তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণের লক্ষ্যে, শান্তির লক্ষ্যে, বিরোধী দলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অনুরোধ করেছেন যেন এই প্রস্তাব বিবেচনা করেন। তিনি বলেছেন, বিরোধী দল তাদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে, নাম পাঠাতে পারেন যারা অন্তবর্তীকালীন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হবেন। তিনি সংখ্যা উল্লেখ করেননি।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শুরুতেই গত পাঁচ বছর আইন-শৃংখলা রক্ষার কাজে আন্তরিকতা ও দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য পুলিশ ও র্যাবকে ধন্যবাদ জানান অতঃপর তিনি জাতির পিতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার উপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি আরোপিত ১/১১ নামক সরকার পদ্ধতিকে তিনি জগদ্দল পাথর হিসেবে বর্ণনা করেন এবং তার জন্য বিএনপিকে দোষারোপ করেন। এই প্রেক্ষাপটেই তিনি ঘোষণা দেন যে, অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া বাংলাদেশে আর চালু হবে না।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে তাঁর সরকারের গত পাঁচ বছরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেন। বিশেষ করে, গ্রাম পর্যায়ে কম্পিউটার সুযোগ সুবিধা অর্থাৎ তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ, সকল প্রতিষ্ঠানে পেশাগত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ, সশস্ত্র বাহিনীতে বেতন বৃদ্ধি, পদমর্যাদার উন্নতি ও শোভনীয়তা বৃদ্ধি, পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ইত্যাদি উল্লেখ করেন। বিদ্যুতের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ৯৭১৩ মেগাওয়াটে উন্নীত করনের কথাও তাঁর বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন। মায়ানমারের কাছ থেকে আইনগত লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য সমুদ্র বিজয় করে আনার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
বিগত বিএনপি আমলের শাসনের তিনি কঠোর সমালোচনা করেন এবং বলেন যে, সেই সময় বিশ্ববাসীর সামনে ‘আমাদের মাথা’ লজ্জায় হেট হয়ে যেত। তিনি বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বোমা মেরে, কোরান পুড়িয়ে রাজনীতি করা চলবে না। তিনি এগুলো বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, তিনি বিরোধী দলের নেতাকে সংলাপে ডেকেছিলেন কিন্তু বিরোধী দলীয় নেতা আহ্বানে সাড়া দেননি। তিনি বলেন, বিএনপি সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে মূলতবি প্রস্তাব দিয়েও পরে সেটা প্রত্যাহার করেন। প্রধানমন্ত্রীর মতে, বিরোধী দল নিজেরাই নিশ্চিত নয় যে তারা কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, নাকি নির্দলীয় সরকার চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে বলেন যে, তার সরকারের আমলে ৫৭৭৭টি নির্বাচন হয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে; আগামী সংসদ নির্বাচনও সুষ্ঠু এবং অবাধ হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, তাদের সরকারের আমলেই মাত্র, সার্চ কমিটির মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তি তালাশ করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তিনি সংবিধানের ধারা উদ্বৃতি দিয়ে আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে কোন ধরনের সরকার পরিস্থিতি দাঁড়াবে তার একটি ইঙ্গিত দেন।