নির্বাচনের আয়োজন কেন্দ্র করে নাগরিকদের মধ্যে গভীর শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার খুলনায় নাগরিক প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে আয়োজিত প্রাক-নির্বাচনী আঞ্চলিক পরামর্শ সভার শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু শুধু ইশতেহারে অংকিত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের জন্যও সকলকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি এ ব্যাপারে আরও বলেন, নাগরিকদের কণ্ঠস্বর উপেক্ষা করা হলে দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় অগ্রসর হবে না। তাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও স্বচ্ছতা অপরিহার্য। চট্টগ্রামের বন্দর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশ্নে ড. ভট্টাচার্য বলেন, দেশের অর্থনীতির বিকাশের জন্য এই বন্দর ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন জরুরি। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এটি আরও সক্রিয় ও স্বচ্ছ করে তুলতে হবে। তবে সংস্কার যদি বেঠিক পদ্ধতিতে হয়, তাহলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জিত হবে না। বন্দরের অস্বচ্ছতা ও ধীরগতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন এবং খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাঁদের প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরেন। তারা কর্মসংস্থান, উপকূলীয় মানুষের সুবিধা, সুন্দরবন সংরক্ষণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এ সমস্ত বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা তাদের করণীয় নির্ধারণে মতবিনিময় করেন এবং সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণে আগামী সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন। এর আগে, বৃহস্পতিবার খুলনায় এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ও বাংলাদেশ আয়োজিত আঞ্চলিক পরামর্শ সভায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জনগণের আস্থা না থাকলে নির্বাচন প্রকৃত গণতান্ত্রিক রূপ পায় না। তাই স্বচ্ছতা, মুক্ত আলোচনা ও সততার ভিত্তিতে আস্থা ফিরিয়ে আনাই একমাত্র সমাধান। দেশ বর্তমানে নির্বাচনমুখী হলেও, কেমন নির্বাচন হবে এই প্রশ্ন এখনো উদঘাটিত হয়নি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করার ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া। নাগরিকের কণ্ঠস্বর নেতাদের কাছে পৌঁছানো জরুরি, কারণ শুধু ইশতেহারে লেখা বা সংযুক্ত করলেই তা বাস্তবায়িত হয় না—সবারই নিজের স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। সভায় বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের সম্ভাবনা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও তার বাস্তবায়ন এখনও দৃশ্যমান নয়। পদ্মা সেতুর চালু হওয়ার পরও সেই প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না, জমির মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কর্মসংস্থান বা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি জোগানো এখনও ব্যর্থ। তিনি আরও বলেন, যারা এই অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হবেন, তারা অবশ্যই আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করবেন। ভোটাধিকার প্রয়োগের পরদিন থেকেই গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ নিশ্চিত করবে তার যথাযথ বাস্তবায়ন। সভার সমাপনী বক্তব্যে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান উল্লেখ করেন, জোট বা দল যা কিছু করুক না কেন, সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন না করলে নির্বাচন মানেই ন্যূনতম গণতন্ত্রের প্রতীক হয় না। অতএব, স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে আস্থা ফিরিয়ে আনা আমাদের দেশের জন্য সময়ের দাবি। এ সম্মেলনে রাজনৈতিক নেতা, সচেতন নাগরিক, শিক্ষক, গবেষক, আইনি প্রতিনিধি, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী অংশগ্রহণ করেন। এখানে উল্লেখ্য, খুলনা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা রাখেন উন্নত কর্মসংস্থান, উপকূলীয় এলাকার সুবিধার সম্প্রসারণ, সুন্দরবন সংরক্ষণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য।