1. [email protected] : Staff Reporter : Staff Reporter
শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ খবরঃ

মেক্সিকোতে দুই মৌসুমি ঝড়ের প্রভাবে নিহত ৬৪, নিখোঁজ ৬৫

  • আপডেটের সময় : বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

মেক্সিকোর উপসাগরীয় উপকূলে শরৎকালীন দুই ভয়াবহ মৌসুমি ঝড়ের কারণে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস ও তেল দূষণ ঘটেছে। উপসাগরীয় শহর পোজা রিকা ঘুরে দেখা যাচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতার চিত্র। ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের ফলে অন্তত ৬৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আর ৬৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এই বন্যার ফলে প্রায় এক লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষ করে ভেরাক্রুজ, হিদালগো, পুয়েবলায়, কোয়েরেতারো এবং অন্যান্য পাঁচটি রাজ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

তেল উৎপাদনের জন্য পরিচিত পোজা রিকা এখন তেল ঝরনার কবলে পড়ে গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কাছাকাছি রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থা পেমেক্সের স্থাপনাগুলো থেকে তেল ছড়িয়ে পড়েছে, তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন পায়নি।

লিলিয়া রামিরেজ নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘পানিতে ডুবে যাবার আগের মুহূর্তে আমি খুব সহজে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। ফিরে দেখতে পাচ্ছি আমার বাড়ির প্রথম তলা ছাদ পর্যন্ত পানি ও কাদায় ভরে গেছে।’’

বন্যা পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মেক্সিকো সরকার প্রায় ১০,০০০ সেনা ও উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করেছে। হেলিকপ্টার দিয়ে ২০০টি বিচ্ছিন্ন এলাকার জ্বর, খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করা হচ্ছে এবং আহত ব্যক্তিদের দ্রুত জীবনের ঝুঁকি থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে, ত্রাণে কোনো ফাঁকি দেওয়া হবে না। তবে দেশের দুর্গম কিছু অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছাতে কিছু দিন সময় লাগবে।’’

বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬ থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ভেরাক্রুজে প্রায় ২৪.৭ ইঞ্চি (৬২.৭ সেন্টিমিটার) বৃষ্টি হয়। এই ভারী বর্ষণে ভেরাক্রুজে ২৯ জন, হিদালগোতে ২১ জন, পুয়েবলায় ১৩ জন, এবং কোয়েরেতারোতে ভূমিধসের কারণে এক শিশুসহ আরও অনেকের মৃত্যু হয়।

সরকার জানিয়েছে, এই ভয়াবহ বৃষ্টিপাতের জন্য মূলত দায়ী হারিকেন প্রিসিলা ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় রেমন্ড। এই ঝড়গুলো মেক্সিকোর পশ্চিম উপকূলে তৈরি হয় এবং ব্যাপক প্রভাব ফেলে। নৌবাহিনীর সচিব রেমুন্ডো মোরালেস জানান, কয়েক মাস ধরে নদীগুলো একটানা ভারী বৃষ্টির কারণে উপচে পড়ছিল। বর্ষণে ভূমিধস ও জলমগ্নতা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়।

প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম বলেন, ‘‘এমন প্রবল বৃষ্টি আমাদের কল্পনাকেও হার মানিয়েছে।’’ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বহু সেতু, সড়ক এবং বিদ্যুৎ অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক শহর এখনো বিদ্যুৎবিহীন হলেও বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ আবার চালু করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি ডেঙ্গু ও অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণ রোধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে।

রবার্তো ওলভেরা নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘পেমেক্সের সংস্থাগুলো থেকে যখন সাইরেন বাজছিল, তখন আমরা বুঝতে পেরেছিলাম বিপদ আসছে। কিন্তু আশেপাশের অনেক মানুষ ঘরে থাকছিলেন—কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন।’’

অব্যাহত প্রবল বৃষ্টি ও তেল দূষণের কারণে পোজা রিকা ও আশপাশের এলাকা এখনো বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। সরকার উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এই দুর্যোগের তীব্রতা এবং পরিবেশগত ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য আরও সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সকালেরফেনি.কম
Design & Developed BY HostingNibo