1. [email protected] : Staff Reporter : Staff Reporter
শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ খবরঃ

লাদাখে বিক্ষোভ-সহিংসতা: কারফিউ জারি, কারগিলে সম্পূর্ণ বন্দোবস্ত

  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ভারতের হিমালয় অঞ্চল লাদাখে রাজ্য মর্যাদা ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে চলমান উত্তেজনাপূর্ণ আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়ায় লেহ শহরে কঠোর কারফিউ জারি করা হয়েছে। বুধবারের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অন্তত চারজন নিহত ও বেশ কয়েক ডজন মানুষ আহত হন। বিক্ষোভকারীরা বিজেপির স্থানীয় কার্যালয়ে আগুন ধরানোর পাশাপাশি পুলিশের একটি গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ পুড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতি ব্যাপক মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপ নেয়। বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাগুলোর জন্য আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা পরিবেশ কর্মী সোনম ওয়াংচুককে দায়ী করছে। মন্ত্রণালয়ের মতে, তিনি আরব বসন্ত ও নেপালের জেন-জি আন্দোলনের উদাহরণ উল্লেখ করে মানুষকে উসকানী দিয়েছেন। তবে, ওয়াংচুক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো ফলপ্রসূ আলোচনার উদ্যোগ না থাকলে আন্দোলন অর্থহীন। এই বিক্ষোভ ও আন্দোলনের সময় এসে পৌঁছেছে যখন আগামী মাসে লাদাখের অটোনমাস হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে; ২০২০ সালে বিজেপি এই নির্বাচনে বিজয় অর্জন করে। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে লাদাখকে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আলাদা করে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা হয়। তখন থেকেই বৌদ্ধপ্রধান লেহ ও মুসলিমপ্রধান কারগিলসহ বিভিন্ন অংশের মানুষ মর্যাদা ও স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আসছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই বিশেষ মর্যাদার অপসারণের ফলে তাদের জমি, সংস্কৃতি ও সম্পদ সাধারণের নিয়ন্ত্রণ কমে গেছে, অপরদিকে বাইরের অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। লাদাখের জেলা প্রশাসক কবিন্দর গুপ্তা জানিয়েছেন, সহিংসতার ঘটনাগুলোর তদন্ত চলছে এবং আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আরও বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বিশেষ কমিটি লাদাখের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে ৬ অক্টোবর। অন্যদিকে, কারগিলে ঐতিহাসিক ‘সম্পূর্ণ বন্ধ’ বা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় সংগঠনগুলি, যাতে এই অঞ্চল অচলায়তনে পরিণত হয়। বুধবার লেহে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ায় কার্গিল জেলাতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, লেহের জনগণের সংহতি প্রকাশ করে কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ) এই ডাকা দেয়, যার মাধ্যমে সমস্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয় এবং রাস্তায় মানুষের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। ব্যবস্থা হিসেবে প্রশাসন কার্গিলে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৫০ এর বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। শান্তি বজায় রাখতে পুলিশ, আইটিবিপি ও সিআরপিএফ-এর দল মোতায়েন করা হয়েছে। কেডিএ ও লেহ অ্যাপেক্স বডির দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাজ্যের মর্যাদা নিশ্চিত করা, লাদাখের ষষ্ঠ তফসিল ঘোষণা এবং স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দাবি। সংগঠনগুলো অভিযোগ করে, বিজেপি সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করে দেওয়ায় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কেডিএ’র সহ-সভাপতি আসগর আলী কারবালাই সরকারের কঠোরতা কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘বিচারহীনতা ও সহিংসতা বন্ধ করা দরকার’ এবং পুনরায় আলোচনা শুরু করার ওপর জোর দিয়েছেন। অন্যদিকে, ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ড. ফারুক আবদুল্লাহ কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, তিনি বিজেপির উপর আঙুল তোলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার জন্য এই ঘটনার জন্য দায়ভার গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রথমে অহিংস আন্দোলন দেখিয়ে লাদাখের মানুষ জানিয়েছেন তারা শান্তিপূর্ণ পথে চলেছেন, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতায় এই আন্দোলন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। লাদাখ স্বায়ত্তশাসিত পাহাড় উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ড. মোহাম্মদ জাফর আখুন লেহের এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন ও জনগণের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মনে করেন। তিনি সকল ধরনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব হয়।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সকালেরফেনি.কম
Design & Developed BY HostingNibo