পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের জন্য একমত হয়েছে। উভয়পক্ষ আলোচনা ও পরস্পরের অবস্থান তুলে ধরার মাধ্যমে সমস্যাগুলো পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আশাবাদ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান যে গণহত্যা ও অন্য অপকর্ম করেছে, তার জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করবে বলে প্রত্যাশা। এছাড়া, পাকিস্তান থেকে আটকেপড়া বাংলাদেশিরা দেশে ফিরে যাবেন—এ বিষয়েও বাংলাদেশ আশাবাদী। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, দুই দেশ অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে চায় এবং সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে এগুলো পেছনে ফেলতে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, এই ভালো সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখতে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও সমাধান খুঁজে বের করতে উভয় পক্ষ একত্রে কাজ করবে।
রোববার, ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর, রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি আরও জানান, একে অন্যের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে, দুপক্ষে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো স্মুথলি ও সুসংহতভাবে এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, এই অগ্রগতি কার্যত সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব করতে উৎসাহ দেয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনায় উঠে এসেছে, অর্থনৈতিক বিষয়গুলো যেমন হিসাব-পত্র ও টাকার ব্যাপারে সমাধান করতে হবে। এছাড়া, গণহত্যার জন্য পাকিস্তান যেন দুঃখ প্রকাশ করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে। পাশাপাশি, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আটকেপড়া মানুষজনকে ফেরত নেওয়ার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করা হয়েছে। তৌহিদ হোসেন আবার বলেন, ৫৪ বছর ধরে চলা এই সমস্যা একদিনে সমাধান হওয়ার আশা কেউ করে না, কেবল আলোচনা ও আন্তরিকতা দিয়ে এগুলো অতিক্রম করতে হবে। তিনি সাংবাদিকদের বলছিলেন, এই বিষয়ের জন্য একটি অগ্রগামী পদক্ষেপ হয়েছে, যেখানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুই পক্ষের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, একাত্তর ইস্যুতে ১৯৭৪ সালের ত্রিপक्षীয় চুক্তি ও ২০০২ সালে মোশাররফের দুঃখ প্রকাশের বিষয় আলোচনায় এসেছে। তবে, তৌহিদ হোসেন এর উত্তর দেন, এই চুক্তি বা দুঃখ প্রকাশের বিষয় আমাদের সমস্যা সমাধানে কোনো অবদান রাখে না; আমরা নিজেদের অবস্থান বলে দিয়েছি।
পররাষ্ট্র বিনিময়ের সময়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান স্বাক্ষর করে একটি চুক্তি এবং পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)। এর মধ্যে থাকছে: ভিসা মুক্ত চুক্তি (সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য), বাণিজ্য বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির সহযোগিতা, রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যেকার পারস্পরিক সহযোগিতা ও, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ওপেন ইনস্টিটিউটের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা।
বৈঠকের আগে, সকাল ১০টায়, দুই নেতার মধ্যে একান্ত বৈঠক হয়। এরপর, আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়, যেখানে ইসহাক দার পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল নেতৃত্ব দেন এবং তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন। আলোচনা শেষে, দেশ দুটির প্রতিনিধিরা বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।
সন্ধ্যায়, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইসহাক দার জন্য এক মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করে সরকার। এরপর তিনি বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ও সাক্ষাতের জন্য সরকারি বিভিন্ন দফতরে যান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডঃ শফিকুর রহমানের বাসায় সাক্ষাৎ করেন।
উল্লেখ্য, এই সফর শুরু হয় গত শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসহাক দার উপস্থিতিতে। এর আগে, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায় এসেছেন। এই সফর বাংলাদেশের মামলার মধ্যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এবং সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।