সোমবার ভোর রাত সাড়ে ৩টায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-২ (র্যাব-২) ও স্থানীয় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) ৩১ নেত্রকোনা ব্যাটালিয়নের সদস্যরা যৌথভাবে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মোট ছয় জঙ্গি সদস্যকে আটক করেছে। আটককৃতদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও একজন নারী। আজ দুপুরে র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার শাখাওয়াত হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেনঃ “নিশ্চিত গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে, র্যাব-২ ও বিজিবির ৩১ নেত্রকোনা ব্যাটালিয়নের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি সহযোগী জঙ্গিবিরোধী অভিযান দল নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে গতকাল রাত সাড়ে ৩টায় একটি জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের পাঁচ জন পুরুষ ও এক নারীসহ মোট ছয় জঙ্গিকে আটক করা হয়। তবে আনুমানিক তিন থেকে চারজন জঙ্গি সদস্য আটক এড়াতে সক্ষম হয়। আমাদের অনুসন্ধান দল বর্তমানে এই পলাতক সদস্যদের একটি সক্রিয় অনুসরণে নিযুক্ত রয়েছে, তাদের শীঘ্রই গ্রেফতার প্রত্যাশায করছি।
অভিযানের সময় ঘাগড়ার একটি বাসা থেকে জঙ্গি সংগঠনটিকে আটক করা হয়েছিল। তাদের গ্রেপ্তারের সময়, ধর্মীয় উস্কানিমূলক লিফলেট, জঙ্গি প্রশিক্ষণ সামগ্রী, ডিভিডি, দুটি ডিভিডি প্লেয়ার, ৫৮টি চরমপন্থী বই, দুই ডজন ধারালো চাপাতি এবং ব্লগারদের হত্যার জন্য প্রস্তুত একটি হিট লিস্ট সহ যথেষ্ট পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। গ্রুপটি একটি গোপন জঙ্গি স্লিপার সেল হিসাবে কাজ করছিল। সন্দেহ করা হয় যে এই স্লিপার সেল নাস্তিক ব্লগার এবং লেখকদের নির্মূল করার গোপন পরিকল্পনায় নিয়োজিত ছিল, যার ফলে দেশের মধ্যে একটি নতুন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। আনসার আল ইসলামের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা। তারা এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে যারা তাদের আদর্শিক বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত হয়, বিশেষ করে মুক্ত চিন্তার লেখক, ব্লগার এবং প্রকাশকদের। ব্লগারদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হিটলিস্ট তথা ব্লগার হত্যার তালিকায় মোট ৬০ জন ব্লগারের নাম রয়েছে।তারা হলেনঃ আসিফ মহিউদ্দিন, ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আসাদ নুর, আরিফ জেবতিক, শাহমিরান আহমেদ, সুব্রত শুভ, তসলিমা নাসরিন, আরিফুল ইসলাম প্রান্ত, এমডি মিজানুর রহমান, ফড়িং ক্যামেলিয়া, মুনাওয়ারা মুবাশিরিন, আরিফুর রহমান, অমি রহমান পিয়াল, সৈয়দা মহসিনা ডালিয়া, মনজুরুল হক, রাসেল পারভেজ, মনির হাসান, নাফিউর রেজয়ান, আবুল কাশেম, অনন্য আজাদ, উম্মে আয়মন নিশু, সৈকত চৌধুরী, রেহানা আক্তার, ইমামুল মুরসালিন, মমতা জাহান, নাদিয়া ইসলাম, প্রণব আচার্য প্রমুখ।”
পলাতকদের ধরতে তাদের অভিযান চলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। শিগগিরই তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং বিস্তারিত তথ্য জানানোর প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার শাখাওয়াত হোসেন।