1. [email protected] : Staff Reporter : Staff Reporter
বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ খবরঃ
২০২৫ সালের শেষে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা বিজয় দিবসে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিজয় কেতন উড়াল বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস লেখা হয়নি: বদরুদ্দীন উমর গুম-খুনের অভিযোগে ক্ষমা চেয়ে আয়নাঘরের কথা স্বীকার করলেন র‍্যাব ডিজি ঐক্যের ডাক হাসনাত আব্দুল্লাহর দেশের জন্য ক্ষতিকর চুক্তি বাতিলের দাবি করা হয়েছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য চলমান অপচেষ্টা নতুন বাংলাদেশের যাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার রমেন রায়ের ওপর হামলার ঘটনাটি পুরোনো, তিনি চিন্ময়ের আইনজীবী নন

কৃত্রিমভাবে স্বাস্থ্য ভালো দেখাতে পারছে ব্যাংক

  • আপডেটের সময় : রবিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২২

ঋণ আদায় না করেও আয় দেখাতে পারছে ব্যাংক। অনাদায়ী ঋণ নিয়মিত দেখানো যাচ্ছে। এর ফলে অনেক ব্যাংক কৃত্রিমভাবে আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো দেখাতে পারছে। শুধু করোনার এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সুযোগ দিয়েছে তা নয়। গত কয়েক বছরে খেলাপি ঋণ যখনই বেড়েছে, তখন বিশেষ পুনঃতপশিল, পুনর্গঠন বা অন্য উপায়ে এসব সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খেলাপি ঋণ না কমে বরং বেড়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদন প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যাংকার বলেন, ২০২১ সালে ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে কিস্তির সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ায় একজনের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা এমনিতেই তার চেয়ে কম পরিশোধ করলেও খেলাপি হতো না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কোনো একজন ব্যবসায়ী হয়তো আট বছর মেয়াদি একটি ঋণ নিয়েছিলেন। চার বছর নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের পর হয়তো আরও ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধ করার কথা। এর মধ্যে ২০২১ সালে হয়তো পরিশোধ করতে হতো ১০০ কোটি টাকা। তবে মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগের ফলে এমনিতেই তিনি ছয় বছর সময় পাচ্ছেন। এতে হয়তো তার ১০০ কোটি টাকার জায়গায় ৬৫ কোটি টাকা পরিশোধ করলেও খেলাপি হতো না। শেষ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ দিলেও খেলাপি না করার বিধান করা হয়েছে। এতে করে এখন তিনি ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও আর খেলাপি হচ্ছেন না। অথচ পুরো ৪০০ কোটি টাকার বিপরীতে আরোপিত (৯ শতাংশ ধরে) ৩৬ কোটি টাকার সুদ ওই ব্যাংক আয় খাতে নিতে পারবে। এর বিপরীতে ব্যয় বাদ দিয়ে পরিচালন মুনাফা হিসাব হয়। সেখান থেকে প্রভিশন সংরক্ষণের অবশিষ্ট অংশের ওপর সাড়ে ৩৭ শতাংশ সরকারকে কর বাবদ পরিশোধ করতে হবে। লভ্যাংশ বাবদ একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ হবে। অথচ পরবর্তীতে এই ঋণ খেলাপি হলে তা আর ফেরত যাবে না।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও সোনালী ব্যাংকের এক সময়ের চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা ও সুশাসনের জন্য যা কাঙ্ক্ষিত নয়। ব্যাংকের খাতায় ভালো চিত্র দেখানো হচ্ছে। তবে আসল চিত্র সবাই জানে। এ প্রবণতা চলতে থাকলে আমানতকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা বাড়বে। তখন আমানত কমে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমবে। আবার ঋণ পরিশোধ না করার নতুন একটি গ্রুপ তৈরি হবে। এ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বেরিয়ে আসতে হবে।

করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ঋণ শ্রেণীকরণ বিষয়ে বিশেষ সুবিধার প্রথম সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় ১ জানুয়ারি ঋণের শ্রেণিমান যা ছিল, তার চেয়ে বিরূপমানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। তবে কোনো ঋণের শ্রেণিমানের উন্নতি হলে তা করা যাবে। এ সুবিধার মেয়াদ দু’দফায় বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এর মানে কেউ ২০২০ সালে এক টাকা পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি করেনি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ঢালাওভাবে এ রকম সুবিধার ফলে সামর্থ্য থাকলেও ঋণ পরিশোধ না করার একটি নতুন পক্ষ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ব্যাংকগুলো। ঋণ শৃঙ্খলা ধরে রাখতে নতুন করে ঢালাও সুবিধা না দেওয়ার দাবির মধ্যে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এক নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে জানানো হয়, ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ আর বাড়বে না। তবে ঋণ পরিশোধের চাপ কমাতে কিস্তির পরিমাণ কমানোর ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে অবশিষ্ট মেয়াদের ৫০ শতাংশ সময় বৃদ্ধি এবং চলতি মূলধন ও ডিমান্ড ঋণ পরিশোধে ২০২২ সালের জুন ও ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্যাংকার জানিয়েছেন, ব্যাংকের আর্থিক ভিত শক্তিশালী করার সব চেয়ে বড় উপায় খেলাপি ঋণ কমানো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থার চেয়ে নীতি সহায়তার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখানোকে উৎসাহিত করছে। এতে করে সাময়িকভাবে আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখানো গেলেও দীর্ঘ মেয়াদে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারা জানান, ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত থাকার সুবিধার ফলে টাকার প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এতে করে কাগজে-কলমে ঋণ বাড়লেও অর্থনীতিতে তেমন গতি সঞ্চার করছে না।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংকারদের কর্মদক্ষতা বিচারের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে মুনাফা কেমন হয়েছে এবং খেলাপি ঋণ কতটুকু নিয়ন্ত্রণ বা কমাতে পেরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি ক্ষেত্রেই চাপমুক্ত নীতি অবলম্বন করেছে। একদিকে ব্যবসায়ীদের কম ঋণ পরিশোধ করলেও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ দিয়েছে, আবার প্রকৃত আদায় না করেই আয় দেখানোর সুযোগ দিচ্ছে। এ সুবিধার ফলে সুযোগ থাকলেও অনেকে টাকা ফেরত দিচ্ছে না। আবার আদায় না করেও যেহেতু আয় দেখানো যাচ্ছে, ব্যাংকারদের অনেকের মধ্যে এ কারণে আদায় নিয়ে মাথাব্যথা নেই। ঋণ শৃঙ্খলার জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা। যে কারণে এভাবে ঢালাওভাবে সুবিধা না দিয়ে সমস্যাগ্রস্তদের জন্য কেস টু কেস ভিত্তিতে সুবিধা দেওয়া যেত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে ঋণ শ্রেণীকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে আয় না করে পুরো লভ্যাংশ যেন বিতরণ করতে না পারে, সে জন্য বিভিন্ন কঠোর নীতি নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সাধারণ প্রভিশন রাখতে বলা হয়েছে। আবার লভ্যাংশ বিতরণেও একটি সীমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সুবিধার কারণে ঋণ যদি আদায় হয় তাতে ব্যাংক ও উদ্যোক্তা উভয়ে উপকৃত হয়। এসব কারণে করোনার আগেও বিভিন্ন সময়ে ঋণ পুনঃতপশিল ও পুনর্গঠনে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের মোট ঋণ স্থিতি রয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কাগজে-কলমে খেলাপি রয়েছে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে খেলাপি তবে অবলোপনের মাধ্যমে আর্থিক স্থিতি থেকে বাদ দেওয়ায় প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হচ্ছে না ৪৩ হাজার ৬০৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। এর বাইরে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপুল অঙ্কের অনাদায়ী ঋণ নিয়মিত দেখানো হচ্ছে। যে কোনো উপায়ে একটি ঋণ নিয়মিত থাকলেই তার বিপরীতে পুরো আয় নিতে পারে ব্যাংক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়লেও বিভিন্ন ছাড়ের কারণে প্রতিবেদনে তার প্রতিফলন হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ হয়েছিল ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে।

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে ২০১৯ সালের ১৬ মে ঋণ পুনঃতপশিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালার আলোকে ওই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট বা এককালীন জমার বিপরীতে ১০ বছরের জন্য পুনঃতপশিলের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুবিধা নিয়ে পুনঃতপশিল হয় ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ। ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি এক সার্কুলারের মাধ্যমে বড় ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে এ রকম ১১টি ব্যবসায়ী গ্রুপের ১৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকার ঋণে সুদহার কমানো, পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোসহ নানা সুবিধা দিয়ে ২০১৬ সালে পুনর্গঠন করা হয়। এর আগে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০১৩ সালে শিথিল শর্তে ঋণ পুনঃতপশিলের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সুবিধার আওতায় পুনঃতপশিল হয় ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ। এসব সুবিধা নেওয়া ঋণের বড় অংশই পরবর্তীতে খেলাপি হয়েছে। তবে করোনায় ঢালাও ছাড়ের কারণে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বরং ২০২১ সালে অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ব্যাপক বেড়েছে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সকালেরফেনি.কম
Design & Developed BY HostingNibo