জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি, তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে গত ৫৪ বছর ধরে বারবার জনগণের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, একাত্তরের দালাল এবং চব্বিশের দালালদের বিরুদ্ধে আমাদের তরুণ ও সাধারণ জনগণ একত্রিত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, আগামীতে সঠিকভাবে মুক্তি ও উন্নতি অর্জন করা। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর), মহান বিজয় দিবসের সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের নেতা সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীসহ আরও অনেকে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়। তখন দেশের সাধারণ মানুষ সম্মান, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিল। এই ভূখণ্ডের মানুষ যুগ যুগ ধরে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে আসছে। সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই আজকের এই স্বাধীনতা অর্জিত। আমরা আজ তাদের স্মরণ করি, যারা দেশের জন্য জীবন খেটেছে, শহীদ হয়েছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আত্মোৎসर्ग করেছে।’
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘আজকের দিনে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জানাই, তাদের আত্মত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞ। তবে, স্বাধীনতা পেয়েও দীর্ঘ ৫৪ বছরেও আমরা দেখেছি, দেশের সার্বভৌমত্ব ও রূপান্তরিত আদর্শ বাস্তবায়নে বারেবারে প্রতারণার শিকার হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি, বরং দেশে ফ্যাসিবাদ কাÐেম হয়েছে। সেই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে জনগণের বিশাল গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লব সংঘটিত হয়। এই দীর্ঘ সংগ্রামের উদ্দেশ্য হলো, অতীতের মতো ভবিষ্যৎেও আমাদের একটি উন্নত, সমবায় ও সত্যিকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।’
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর আমাদের বার্তা হলো, যারা বিভিন্ন শক্তি দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায়, তারা নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে অস্থিতিশীল করতে নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জনগণের চাহিদা হলো শান্তি, নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেবে।’
নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করতে হবে। বরং আমাদের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে জনগণের মধ্যে কাজ করতে হবে। করোনা ও অন্যান্য সংকটকালীন সময়ে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই রাখতে হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের ওপর নির্ভরশীল থাকলে নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব নয়।’
ভবিষ্যতের নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি গণভোট। এই ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা হবে, দেশের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া, সংস্কার ও পরিবর্তন আনা। এনসিপির প্রার্থীরা এসব প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটের জন্য প্রস্তুত।’
অবশেষে, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘আমরা সরকারের রাজনীতি ও সমাজের উন্নয়ন জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাব, কখনোই পুরোনো অতীতের জায়গায় ফিরে যাব না। আমাদের লক্ষ্য, একটি শান্তিপূর্ণ, সমবায়, উন্নত এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। জনগণের ঐক্য এই লক্ষ্যে আমাদের শক্তি। আমরা একত্রে এগিয়ে যাব, ’৭১ এর দালালদের বিরুদ্ধে ও ’২৪ এর দালালদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। সামনে আমাদের বিজয় নিশ্চিত।’