ওমান উপসাগরে চোরাচালানের জন্য বহন করা একটি ডিজেলবাহী ট্যাংকারকে জব্দ করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। এই জব্দকৃত জাহাজে থাকা ১৮ জন ক্রুকে আটক করা হয়েছে, এর মধ্যে কিছু বাংলাদেশের নাগরিকও রয়েছেন। তবে কতজন বাংলাদেশি এই অভিযানের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। এই খবর জানা গেছে চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনের মাধ্যমে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরআইবি শুক্রবার জানিয়েছে, ওমান উপসাগর থেকে ৬০ লাখ লিটার চোরাচালানের ডিজেল বহনকারী এই বিদেশি ট্যাংকারটিকে আটক করা হয়েছে। দক্ষিণ হুরমুজগান প্রদেশের প্রধান বিচারপতি মুজতবা গাহরেমানির বরাত দিয়ে তারা জানায়, মূল জালিয়াতি চক্র ও চোরাকারবারিদের মোকাবিলা করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইরানের জাসক বন্দর শহরের কাছে জলসীমা থেকে এই জাহাজটি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
মুজতবা গাহরেমানি বলেন, জাহাজটির প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং চালানের ‘বিল অফ ল্যাডিং’ না থাকার কারণে এটি সন্দেহের মুখে পড়ে। তিনি উল্লেখ করেন, জাহাজটি সব নেভিগেশন ও দিকনির্দেশনা সিস্টেম বন্ধ করে রেখেছিল। এছাড়াও, এই ট্যাংকারে ১৮ জন ক্রু ছিলেন, যাদের মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের নাগরিক রয়েছেন।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আটককৃতদের মধ্যে ট্যাংকারের ক্যাপ্টেনও রয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ক্রুদের বেশিরভাগই আগে ভারত, শ্রীলঙ্কা, বা বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিভিন্ন নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ‘ থামার নির্দেশ অগ্রাহ্য করা’, ‘পালানোর চেষ্টা’ এবং নেভিগেশন ও কার্গো চালানের নথিপত্র না থাকা।
অতিরিক্ত ভর্তুকি ও স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়ার ফলে ইরানে জ্বালানির দাম বিশ্বের অন্যতম নিন্মে থাকছে। এর ফলে স্থল ও জলপথে ব্যাপক হারে জ্বালানি চোরাচালান ঠেকাতে কঠোর অভিযান চালানো হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য করে বল হয়, বিশ্বের অন্য কোনো দেশের তুলনায় ইরানে গ্রাহক পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম সবচেয়ে কম। সরকারের এই সুবিধার কারণে দেশটিতে জ্বালানি চুরি ও পাচারকারীর গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, যারা সস্তায় তেল কিনে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে।
এপ্রিল মাসে পারস্য উপসাগর থেকে একাধিক চোরাইকৃত জাহাজ জব্দ করেছিল ইরানিরা। অন্যদিকে, গত বুধবার ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করে মার্কিন নৌবাহিনী, যা মূলত ইরান ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে তেল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এই জাহাজের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অবৈধ তেল পরিবহন চলছিল।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ভেনেজুয়েলারে বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনেকবারই ব্যবস্থা নিয়েছে। এই ধারাবাহিক চুরি ও অবৈধ কার্যক্রমের কারণে ইরান ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে বৈরিতা বাড়ছে।