এক
সেদিন সাকিব আল হাসানের ভেরিফাইড পেইজে দেখলাম, উনি হজ্ব করতে যাচ্ছেন এবছর, তাই দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে – সুন্দর ও মার্জিত একটি পোস্ট দিয়েছেন। অথচ সেই পোস্টের নীচে বেশ কিছু কমেন্টস দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেল! সাকিবের খেলা আপনার ভালো না ই লাগতে পারে, সাকিবের খেলার পাশাপাশি তার রাজনৈতিক সংযুক্তি আপনার ভালো না ই লাগতে পারে- সেগুলোর কোন কিছুর সাথেই সাকিবের পরিবার জড়িত না, আর আপনি বা আপনারাও সাকিবের তালতো ভাই – ইয়ার – দোস্ত না যে, তার স্ত্রী – কন্যা কি পড়বে, কোথায় ছবি তুলবে; সেগুলোর উপদেশ দিতে দিতে শর্টকাট বেহেস্তের রাস্তা খুঁজেতে, তার ফেসবুক পোস্ট বেছে নিবেন। অনেক তো হলো ভাই, আর কত! আপনারা কি খুঁজে পান শুধু এই সাকিব – এই জাফর ইকবাল টাইপ মানুষগুলোকেই? অবশ্য কথায় ই আছে শক্তের ভক্ত নরমের যম! আছে সাহস কারো নিজের রাজনৈতিক মাথাওয়ালাদের ঘুষখোর – দুর্নীতিবাজ বলে একটা পোস্ট দেয়ার ক্ষমতা? জ্বী না, ততটুকু সাহস আমাদের দেশের ৯৫ ভাগ মানুষের ই নেই।
বিস্মিত হবো না কখনো যদি, সাকিব দেশ ছেড়ে অন্য কোন দেশে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। গুনীর কদর করতে না জানলে সে দেশে আর গুনী মানুষ জন্মায় না, জানেন তো?
দুই
যেই দেশে ৪৭ বছরে একটা আন্তর্জাতিকভাবে উচ্চ মানের তো দূরে থাকুক, এশিয়ান মানের একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেনি; উন্নত মানের বিজ্ঞানমনষ্ক কোন গবেষণা কেন্দ্র গড়ে উঠেনি; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় শতভাগ শিক্ষকেরা দলীয় চাটুকারি পেশার বাহিরে গিয়ে যেখানে মেরুদন্ড সোজা করে কথা বলতে পারেন না — সেই দেশ কে ‘ ভদ্র জাতি’ অথবা উন্নয়নশীল জাতি বলে গন্য হতে এখনো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।
এগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইস্তেহারে থাকা না থাকার বিষয় নয়, এগুলো ভদ্র, শিক্ষিত এবং উন্নত জাতিসত্তার মৌলিক চাহিদা। এগুলো যতদিন আমরা বাস্তবায়ন করতে না পারবো, ততদিন “ভদ্র, শিক্ষিত, উন্নত জাতি” শব্দগুলো কেবল আমাদের রাজনৈতিক পোস্টার র টিভির টকশো গুলোতেই দলের চটুকারদের মুখের মহান বানী হয়েই থাকবে, এর কোন বাস্তবিক প্রতিফলন আমরা কোথাও দেখতে পাবোনা। কাগজে – কলমে আর সরকারি হিসাবে শিক্ষিতের হার শতভাগ হওয়ার পরে ও দেশ ভরে থাকবে অভদ্র, অসভ্য আর অশিক্ষিত মানুষে। এখন আপনি নিজেই হিসাব করে দেখুন আমরা তেমন একটি সভ্য, ভদ্র আর শিক্ষিত জাতি হতে কতটুকু দূরে দাঁড়িয়ে আছি!
তিন
আমাদের এই ছোট্ট দেশে জনসংখ্যার যে বিশাল বহর আমরা অপরিকল্পিতভাবে নিয়ে এগিয়ে চলেছি, সেই ভার আমরা কতদিন বহন করতে পারবো সেটা অবশ্যই একটা চিন্তার বিষয়। মধ্যপ্রাচ্য আর মালয়েশিয়া – সিংগাপুরে যেনতেন ভাবে কিছু শ্রমিক পাঠানো ছাড়া আমরা এই বিশাল জনসংখ্যা কি কাজে লাগাতে পারছি, সেটা মনে হয় আমাদের ভেবে দেখার সময় অনেক আগেই হয়েছে! আমাদের কাছাকাছি দেশ চায়না, আমাদের মতো নিজেদের অনেক ধরনের অসুবিধা থাকা সত্বেও প্রতিনিয়ত চেস্টা করে যাচ্ছে নিজেদের বিশাল জনসংখ্যা কে মানব সম্পদ রুপে গড়ে তুলতে। আন্তর্জাতিক বাজারে সস্তা জিনিসের বাজার বিশাল একটা অংশ আজ চায়নার দখলে, আর আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নিজ খরচে রোবট তৈরী করার পর তার কোন স্পনসর না পেয়ে, সেই চেস্টায় ক্ষ্যান্ত দেয় একসময়! অথচ রাজনৈতিক দলেরগুলোর ছাত্র নামধারী অছাত্ররা কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যায়! বিচিত্র এই দেশ!!
চার
দেশের সরকার বরাবরই দেশে উন্নত প্রযুক্তির কথা বলছেন, সেই লক্ষ্যে কাজ ও নাকি করছেন। কিন্তু একই সাথে সেই উন্নত প্রযুক্তি পরিচালনা করার মতো দক্ষ আর পরিপক্ব মানসিকতার জনবল কি আমরা তৈরী করতে পারছি? আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কয়জন শিক্ষকের কোন গবেষণার কাজ কোন দেশী বিদেশী জার্নালে স্থান পায়, কেউ বলতে পারবেন? আদৌ শতকরা কতজন শিক্ষক গবেষণা করেন, কেউ জানেন? দেশের উন্নত প্রযুক্তির এই থ্রিজি – ফোর জি – ফাইভ জি আমলে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ওয়েব পেইজে কি কি জিনিস থাকে, সেগুলো বর্তমান সময়ের উন্নত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কতটা তুলনাযোগ্য – কেউ বলতে পারেন?
পাঁচ
এই মানুষ, সভ্যতা আর প্রযুক্তি কে কাজে লাগিয়ে যেমন চাঁদে পৌছে গিয়েছি, তেমনি মারামারি হানাহানি – সম্পদের যথেচ্চ অপব্যবহারে পৃথিবীটা কে ধংসের দারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছি – আমরা মানুষেরা ই। শুধুমাত্র হাতের আঙুলের ডগায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রাপ্তি সহজলভ্য করে দিলেই হবেনা, সেই প্রযুক্তি গঠনমূলক আর দেশের উন্নয়নমুলক কাজে ব্যবহার করার জন্য দেশের জনসংখ্যা কে ও গড়ে তুলতে হবে মানবসম্পদ হিসাবে। অন্যথায় আমাদের এই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে শুধুমাত্র নিজেদের বিবাদ আর বিনাশের কাজে।
এখন আমাদের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়…..