শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় এজাহার পরিবর্তনের মামলায় রাজশাহীর পুঠিয়া থানার সাময়িক বরখাস্তকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকিল উদ্দিন আহমেদকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১৬মে) হাইকোর্টের বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এদিন আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর হাইকোর্ট তার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছিলেন। তখন ওসি শাকিলের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আইনজীবী এমকে রহমান ও তার সঙ্গে ছিলেন মামুন মাহবুব।
আইনজীবীরা জানান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থেকে পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের প্রবিধান ২৪৩ ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারা সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধমূলক অসদাচরণ করে পুঠিয়া থানার ২০১৯ সালের ১১ জুনের একটি মামলায় আটজন আসামির নাম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও কারসাজি করে ওই এজাহার পরিবর্তন করেন।
এছাড়া প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামির নাম ও বাসস্থান/ঠিকানা সংবলিত কলামে ‘অজ্ঞাতনামা’ লিপিবদ্ধ করে সই পূর্বক মামলা করার অভিযোগ এনে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন বাদী হয়ে গত ২৪ জানুয়ারি সমন্বিত জেলা কার্যালয়, রাজশাহীতে এ মামলা করেন।
মামলা থেকে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালের ১১ জুন পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের একটি ইটভাটা থেকে উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ওই বছরের ২৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সংগঠনের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে ফলাফল নিয়ে রাজশাহীর আদালতে নুরুল ইসলাম একটি মামলা করেন। মামলা চলাকালীন ওই বছরের ১০ জুন রাতে নিখোঁজ হন নুরুল ইসলাম। পরদিন স্থানীয় একটি ইটভাটায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।
নুরুল ইসলামকে হত্যার ঘটনায় তার মেয়ে নিগার সুলতানা পরদিন পুঠিয়া থানায় প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুর রহমানসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দাখিল করেন। ওসি শাকিল এজাহারটি সংশোধন করতে বলেন বাদীকে। বাদী এজাহার সংশোধন করে দাখিল করেন।
এ বিষয়ে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় নিহতের স্ত্রী রাজশাহীর আদালতে আরেকটি মামলা করেন। তখন আদালতের নির্দেশে পুলিশ নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার একটি এজাহার দাখিল করেন। তবে পুলিশের দাখিল করা এজাহারে মামলায় কোনো আসামির নাম ছিল না। সবাই অজ্ঞাত।
বাদী নিগার সুলতানা আদালতকে বলেন, যে এজাহারটি তিনি থানায় দিয়েছিলেন পুলিশ সেটি আদালতে জমা দেননি। মনগড়া একটি এজাহার দিয়েছেন। যা তিনি থানায় দাখিল করেননি।
এ ঘটানয় ওসি শাকিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন নিহতের কন্যা নিগার সুলতানা। এই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওসি শাকিলকে সাময়িক বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে মামলা করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দেন।